ঢাকা , শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

জুলাই হত্যাকাণ্ডে পলাতকদের ফিরিয়ে আনা হবে: অ্যাটর্নি জেনারেল

নিজেস্ব প্রতিবেদক
আপলোড সময় : ১২-১০-২০২৪ ১০:৪০:১৬ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৩-১০-২০২৪ ১২:২৯:৫২ পূর্বাহ্ন
জুলাই হত্যাকাণ্ডে পলাতকদের ফিরিয়ে আনা হবে: অ্যাটর্নি জেনারেল

অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো: আসাদুজ্জামান বলেণে,শেখ হাসিনা এত মিথ্যা বলেছেন, এমনভাবে বলেছেন, এমন কৌশল করে বলেছেন, তিনি নিজেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে, তিনি যা বলেন সেটাই সত্য, সেটাই বেদবাক্য। শেখ হাসিনা মিথ্যা বলতে বলতে মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছে। তার মিথ্যাচার গোয়েবলসকেও হার মানিয়েছে। গোয়েবলস বেঁচে থাকলে তিনি হয়তো শেখ হাসিনার ছাত্র হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতেন।

তিনি আরও বলেছেন, গত ১৫ বছরে দেশে কার্যত এক ব্যক্তির শাসন কায়েম হয়েছিল। জাতীয় সংসদেও একক কর্তৃত্ববাদে পরিচালিত হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংক্রান্ত রায় পরিবর্তনের মাধ্যমে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক অপরাধ করেছে। যে অপরাধের সুবিধা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, যা নিয়ে তদন্ত চলছে। জুলাই হত্যাকান্ডে জড়িত যারা পালিয়ে গেছে তাদের ফিরিয়ে আনতে আদালতের মাধ্যমে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।

শনিবার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর এফডিসিতে জুলাই হত্যাকান্ডের দায় নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, যারা পালিয়ে গেছে তারা ফিরে এসে বিচারের মুখোমুখি না হলে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জুলাই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে একটি নির্দিষ্ট সিভিলিয়ান গোষ্ঠির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে যে হত্যা ঘটানো হয়েছে তা মানবতা বিরোধী অপরাধ আইন ১৯৭৩ এর মাধ্যমে বিচার করা হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ট্রাইবুনাল পুন:র্গঠন করা হবে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতে বিচার প্রক্রিয়ার ট্রায়াল টেলিভিশনে দেখানোর ব্যাপারে আইনগত দিক পর্যালোচনা করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই জুলাই হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্তদের মানবতা বিরোধী অপরাধে বিচার শুরু হবে। যারা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করেছিল তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, জুলাই—আগস্টের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র জনতার উপর গুলি চালিয়ে নজিরবিহীন হত্যাকান্ড বাংলাদেশে ইতিহাসে বড় কালো দাগ হয়ে থাকবে। পাঠ্যপুস্তকে রচিত হবে জুলাই বিপ্লবের এসব শহীদদের শোক গাঁথা। রক্ত পিপাসু জুলুমবাজ সরকারের অন্যায় অত্যাচারের নির্মম চিত্র। তারা চেয়েছিল রক্তের উপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে। কিন্তু মৃত্যুকে ভয় না পাওয়া ছাত্র জনতা যখন রাজধানী ঘিরে ফেললো এক কাপড়ে পালিয়ে গেল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কিরণ আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের মুখপাত্র হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগসহ তাদের জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে এ হত্যাকান্ডের জন্য প্রধানত দায়ী। তবে নির্বাচন কমিশন, র‌্যাব—পুলিশ, বিজিবিসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন বাহিনীর জনবিরোধী অবস্থানের কারণে জুলাই হত্যাকান্ডের ব্যাপকতা বেড়েছে। তাই জুলাই হত্যাকান্ডের দায় শেখ হাসিনাসহ দলীয় স্বৈরতন্ত্রের পাশাপাশি প্রশাসনিক স্বৈরতন্ত্র সমানভাবে দায়ী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার প্রশাসনের বেশিরভাগ ব্যক্তিরাই এ হত্যাকান্ডের দায় এড়াতে পারে না।

তিনি বলেন, নানা অন্যায় সুবিধা নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তৎকালীন প্রশাসনের আমলা, র‌্যাব—পুলিশ এই গণহত্যার নেপথ্যে খলনায়কের ভূমিকায় কাজ করেছে। আমি—ডামি নির্বাচন, দিনের ভোট রাতে করার মাধ্যমে যারা স্বৈরাচার সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছিল, যারা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানী ও আর্থিক খাতকে ধ্বংস করেছে, তারাও জুলাই হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী। জুলাই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অনেক অপরাধী দেশে বিদেশে পালিয়ে রয়েছে, কেউ কেউ ধরা পড়েছে, আমলাদের অনেকেই এখনো প্রশাসনে ঘাপটি মেরে আছে। এদের দ্রুত বিচার করা না হলে শহীদদের আত্মার সাথে বেঈমানী করা হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে ছাত্র জনতার এই বিপ্লব ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হবে। দেশ সংকটের মুখোমুখি হবে। ফ্যাসিস্টরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তাই জুলাই হত্যাকান্ডের দোসরদের শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে অন্তর্বতীর্কালীন সরকারের দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত।

জুলাই হত্যাকান্ডে দায়ীদের উপযুক্ত বিচারের লক্ষ্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী নিম্নে ১০ দফা সুপারিশ করেন।


নিউজটি আপডেট করেছেন : Voice Protidin Desk

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ